বীর চট্টলা ‘য় সনাতনীদের জাগরণের গণজোয়ার, ৮ দফা দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান?


Shikha BD প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৫, ২০২৪, ৫:৩২ অপরাহ্ন /
বীর চট্টলা ‘য় সনাতনীদের জাগরণের গণজোয়ার, ৮ দফা দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান?

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :: ৮ দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না সনাতনীরা। আট দফা দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যস্ত রাজপথে থেকে লড়াই করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আট দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনে প্রতিটি বিভাগে মহাসমাবেশ হবে, জেলায় জেলায় সমাবেশ করা ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর ঐতিহাসিক লালদিঘি মাঠে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশব্যাপী মন্দির, হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ এবং ৮দফা দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের অংশ হিসেবে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য দাবি তোলা হয় সমাবেশ থেকে।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সনাতনীরা শুধু অবহেলিত ছিল। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্য বদলায় না। যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা সনাতনীদের দুঃখ দুর্দশাকে লুকানোর চেষ্টা করে। সনাতনীদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়, নির্যাতন লুকিয়ে স্বাভাবিকতার কথা বলে। গত ৫৩ বছরে এদেশে হওয়া হিন্দু নির্যাতন, খুনের কোনো বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার এই ধরণের ঘটনা করতে উৎসাহিত হয়েছে। প্রতিবার ভোট পরবর্তী বা ক্ষমতার পালাবদলের সময় নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে হিন্দুদের উপর। সেটা কেন হবে? ৫ আগস্ট পরবর্তী সারাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, বাড়িঘরে হামলা লুটপাট করা হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারের মতো একে ওকে দোষ চাপিয়ে সবাই বাঁচতে চাইছে। কারা দোষী? কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত? তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলেতো বেরিয়ে আসবে কারা সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে জড়িত? কেন সরকার সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করছে না।

বক্তারা বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা দুর্গাপূজায় ১ দিন ছুটি বাড়িয়েছে। তবে সেটি পর্যাপ্ত নয়। আমরা চেয়েছি ৫ দিনের ছুটি। সেখানে ২দিন ছুটি কেন? যেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে এদেশের ছাত্র জনতা প্রাণ দিয়েছে সেখানে আবার বৈষম্য হবে কেন? ক্ষতিগ্রস্থ সনাতনীদের ক্ষতিপূরণ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করার কথা বলেছে সরকার। এটি খুবই ইতিবাচক। খুব দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া ৮ দফা দাবি মেনে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। এই সরকার যদি সনাতনীদের ৮ দফা মেনে নেয় তবে সনাতনীরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। সনাতনীরা আন্দোলন সংগ্রাম করতে জানে, অধিকার আদায়ও করতে জানে। প্রধান উপদেষ্টা সনাতনীদের জন্য শান্তির একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারে সেই আশা করবো আমরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ তপনান্দ গিরি মহারাজ, পটিয়া পাচোরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ^রানন্দ পুরী মহারাজ,কৈবল্যধামের মোহন্ত শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, স্বরুপ দাস বাবাজী,ভারত সেবাশ্রমের স্বামী বিপ্রানন্দ মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজ, উমেষানন্দ গিরি মহারাজ, তুলসী ধামের মোহন্ত দেবদ্বীপ পুরী মিত্র, ঋষিমঠের রামানন্দ পুরী মহারাজ, পরিতোষানন্দ গিরি মহারাজ, ছত্রেশ^র জৌতি মহারাজ,সহ সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাপোযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টিকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ করতে হবে। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড, আধুনিকায়ন করতে হবে এবং শারদীয় দুর্গাপুজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে।