অন্যায়ভাবে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। যারা স্বামীকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেন তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন এবং এমন স্ত্রী থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
সুখী সংসার গঠনে ইসলাম পুরুষদের ওপর গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রাগান্বিত হবে না।
কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার জন্য সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ১৪৬৯)
স্বামীর আনুগত্য.
স্ত্রীদেরও স্বামীর আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শরীয়ত বিরোধী নয়- স্বামীর এমন যেকোনো কথা মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘স্বামী যখন তার প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকে, সে যেন অবশ্যই তার কাছে আগমন করে, যদিও সে চুলার ওপর ব্যস্ত থাকুক। (অর্থাৎ যদিও সে রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত থাকুক)’ (তিরমিজি)।
অন্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তার শয্যায় ডাকে (পারস্পরিক মিলনের উদ্দেশ্যে)। এরপর স্ত্রী যদি স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দেয়, আর স্বামী যদি (তার এ আচরণে কষ্ট পেয়ে) তার প্রতি নারাজ অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে, এমতাবস্থায় জান্নাতের বাসিন্দারা তাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত লানত দিতে থাকে’ (বুখারি)। এ দুটি হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, স্বামীর আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য অপরিহার্য।
অন্যায়ভাবে স্বামীকে কষ্ট দিলে.
অন্যায়ভাবে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। যারা স্বামীকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেন তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন এবং এমন স্ত্রী থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি মন্দ প্রতিবেশী থেকে; এমন স্ত্রী থেকে, যে বার্ধক্য আসার আগেই আমাকে বৃদ্ধ করে দেয়; এমন পুত্র সন্তান থেকে, যে আমার মনিবস্বরূপ হয়ে যায়; এমন সম্পদ থেকে, যা আমার আজাবের কারণ হয় এবং এমন ধোঁকাবাজ বন্ধু থেকে, যার চোখ আমাকে দেখে আর তার অন্তর আমাকে পর্যবেক্ষণ করে। যদি সে ভালো কিছু দেখে, তাহলে তা গোপন করে। আর মন্দ কিছু দেখলে তা প্রচার করে।’ (তাবারানি, সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস, ৩১৩৭)
স্বামী অপছন্দ করেন এমন কাজ করলে.
অনেক নারী স্বামীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বা রাগানোর জন্য স্বামীর অপছন্দনীয় কাজগুলো বেশি বেশি করে থাকেন। স্বামী ঠিকমতো ভরণপোষণ দিলেও খুশি হতে চান না এসব নারী সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কান অতিক্রম করে না।
পলায়নকারী গোলাম যতক্ষণ সে ফিরে না আসে।
এমন নারী, যে রাত যাপন করে অথচ তার স্বামী তার ওপর রাগান্বিত থাকে।
ওই ইমাম, জনগণ যাকে অপছন্দ করে।’-(তিরমিজি, হাদিস, ৩৬০)
স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজ থেকে ফিরে এসে বলেন, ‘আমি জাহান্নাম কয়েকবার দেখেছি, কিন্তু আজকের মতো ভয়ানক দৃশ্য আর কোনো দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন, তাদের অকৃতজ্ঞতার কারণে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর অকৃতজ্ঞতা করে? বললেন, না, তারা স্বামীর অকৃতজ্ঞতা করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারও ওপর যুগ-যুগ ধরে অনুগ্রহ কর, এরপর কোনো দিন তোমার কাছে তার বাসনা পূর্ণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোনো কল্যাণই পেলাম না’ (মুসলিম)।
স্বামীর সন্তুষ্টি.
তাই স্ত্রীদের উচিত অন্যায়ভাবে স্বামীর মনে কষ্ট না দেওয়া এবং স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা। কারণ, যে নারীদের ওপর স্বামী সন্তুষ্ট থাকেন, তাদের জন্য সুসংবাদ শুনিয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন, ‘যদি কোনো স্ত্রীলোক এমতাবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (তিরমিজি)। এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, স্বামীর সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি গুরুত্ব সহকারে আমল করার তাওফিক দান করেন আমীন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।
আপনার মতামত লিখুন :