https://shikhabd.com/google0928d57da4654288.html

সিলেট শহরতলীর বড়কাপনে প্রবাসীকে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন


Shikha BD প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ৫:১৭ অপরাহ্ন /
সিলেট শহরতলীর বড়কাপনে প্রবাসীকে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন

ফারুক আহমেদ চৌধুরী :: সিলেট শহরতলীর জালালাবাদ থানাধীন বড়কাপন গ্রামে চোর আখ্যা দিয়ে প্রবাসী মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। চোখ হারানোর সংখ্যায় ভুক্তভোগী।


গত ৬ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে চুরির অপবাদ দিয়ে চাঁন মিয়া নামক এক প্রবাসীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে তার শারিরীক বিকলাঙ্গতা, দৃষ্টিহীনতা, ও শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে জেল থেকে এসে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার ৮ নং আসামী আক্রম আলীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছে।

জালালাবাদ থানাধীন ২ নং হাটখোলা ইউপির শিবের বাজার দখড়ী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে চাঁন মিয়া (৪৫) ও একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন নামক ব্যক্তিকে পুর্ব শত্রুতার জের ধরে একই গ্রামের ইশাদ আলীর ছেলে সাজিদ আলী (৬৫) এর সশস্ত্র বাহিনী গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। উল্লেখ্য সাজিদ আলী ও তার সহযোগীরা এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। সাজিদ আলীর নামে জালালাবাদ থানায় হত্যা মামলা ও রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায় গত ০৬ নভেম্বর বুধবার রাত আনুমানিক ১১ টার সময় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুর্ব পরিকল্পনামতো সাজিদ আলীর নেতৃত্বে তার সহযোগীরা দা, চাকু, লোহার পাইপ, সহ দেশীয় অস্ত্র সজ্জা সজ্জিত হয়ে চাঁন মিয়ার পথরোধ করে। তিনি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এসময় সাজিদ আলী ও আলআমিন দা দিয়ে মাথার মধ্য ভাগে আঘাত করলে মাথায় জখম হয়,তখন তারা দুজনে আবারও মাথার পেছনে রক্তাক্ত জখম হয়, রুস্তম আলী ও জিয়াউল হক লোহার পাইপ ও কাঠের রুল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে একাধিক আঘাত করে। তাদের উপর্যপুরি আঘাতে চাঁন মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা শরীর থেকে কাপড়চোপড় টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে,

পরবর্তীতে ছইল মিয়ার হুকুমে সাজিদ আলী, আলআমিন, জয়দর আমিন, সুহেল মিয়া চাঁন মিয়ার মুখ এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়। তাদের সাথে থাকা অপর ব্যক্তি আরশ আলীর তাহার চোখে চুন দিয়ে দেয়। অপর ব্যক্তি আক্রম আলী ও সাজিদ আলী তাহার কানের লথি কেটে দেয়। এক পর্যায়ে চাঁন মিয়ার অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় তারা তার সাথে থাকা ১ টি মোবাইল ফোন, নগদ ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চোর ধরা হয়েছে বলে শোর চিৎকার শুরু করে। তাদের শোর চিৎকারে লোকজন ছুটে আসেন।

এ সময় তারা জালালাবাদ থানায় ফোন করে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে চোর সাজিয়ে ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চাঁন মিয়াকে চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার ১২দিন পর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। পরে তিনি চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হসপিটালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এব্যাপারে চাঁন মিয়ার স্ত্রী লিপি বেগম, ১১ নভেম্বর মোকাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ৩য় আদালতে হাজির হইয়া ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১৫/২০ আসামী করে লিখত অভিযোগ দায়ের করেন পরবর্তীতে ১৩ নভেম্বর মামলা রেকর্ড হলে জালালাবাদ থানায় প্রেরন করা হয়। সিআর জালালাবাদ থানার মামলা নং- ৩০৩/২৪ ইংরেজি গত ১৪ নভেম্বর জালালাবাদ থানায় মামলা রজু করা হয়, জালালাবাদ থানার মামলা নং- ১০/২০২৪ ইং।

মামলার আসামি হলেন যারাঃ সাজিদ আলী (৬৫ পিতা-ইশাদ আলী, সাং-দখাড়ী, আল আমিন (৩৫) পিতা-ছইল মিয়া, রুস্তুম আলী (৪০), পিতাঃ তৈয়ব আলী, জিয়াউল হক (৩২) পিতা-আনা মিয়া, জয়দর আমিন (২৬), পিতা-ছইল মিয়া, সুহেল মিয়া (২২), পিতা-হিরন মিয়া, আরশ আলী (৪০), পিতা-সুনু মিয়া, আক্রম আলী (৫৫), পিতা-তৈয়ব আলী ওরফে আলী বাদশা মিয়া, হইল মিয়া (৬৫),পিতা-মৃত জাহির মিয়া, সর্ব সাং- বড়কাপন, সর্ব থানা-জালালাবাদ, জেলাঃ সিলেট সহ ১৫/২০ জন

মামলার বাদী চাঁন মিয়ার স্ত্রী লিপি বেগম জানান, আমার স্বামী একজন প্রবাসী, এলাকার শালিসি ব্যক্তি ছিলেন। বিগত ৬/৭ মাস পুর্বে মামলার ৭ নং আসামী আরশ আলীকে মোবাইল চুরির জন্য তিনি সহ এলাকার লোকজন চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেয়। তাছাড়া ও মামলার ১ নং আসামী সাজিদ আলী বিগত ৩১ মার্চ জালালাবাদ থানার চাঞ্চল্যকর তাজুল হত্যা মামলায় প্রধান আসামী হয়। মামলা নং- জালালাবাদ জিআর ৪১/২০২৪। ঐ মামলার ৬ নং স্বাক্ষী ছিলেন আমার স্বামী। এরপর থেকে আসামীরা প্রায় সময় আমার বসত বাড়ীতে ও রাস্তা ঘাটে প্রাননাশের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৬ নভেম্বর রাতে আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা করে। তাদের হামলায় তিনি বেঁচে গেলেও কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিথর হয়ে আছেন। আমি এসব সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করি।

জালালাবাদ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) জানান, আমরা মামলা রেকর্ড করে মামলার ৮ নং আসামীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করেছি। অন্যান্য আসামিদের আটক করতে আমাদের জোরালো পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।