স্বৈরশাসকের দোসরদের পুনর্বাসনে ‘ভানুমতির খেলা’


Shikha BD প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ৫:০৫ পূর্বাহ্ন /
স্বৈরশাসকের দোসরদের পুনর্বাসনে ‘ভানুমতির খেলা’

স্বৈরশাসকের দোসরদের পুনর্বাসনে ‘ভানুমতির খেলা’ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিরোধিতাকারী মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দায়িত্ব নিতে মরিয়া একটি মহল

স্বৈরশাসকের দোসরদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে গেছে সিলেট বিএনপি ও জামায়াত। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গন সবখানেই শুরু হয়েছে সমঝোতার মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর-সুবিধাভোগীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন সিলেট বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবশালী নেতারা। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে।

সম্প্রতি সিলেটে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের নতুন কমিটি গঠনেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে। স্বৈরশাসকের দোসর ও তাদের সময়ে সুবিধাভোগেীদের সাথে বসে ক্লাবের নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাঁরই মধ্যস্ততায় এই কমিটি করা হয়েছে। এতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন, ভোগ করেছেন। সাবেক এই মেয়রের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো নানা অভিযোগ। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মামলা থেকে বাঁচাতে মরিয়া তিনি। এছাড়াও নিজের বাগান বাড়ি পাঠানটুলা গোয়াবাড়িতে আওয়ামী লীগ পন্থি সিসিকের কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সিলেটের প্রভাবশালী স্বৈরাচারের দোসরদের পূর্ণবাস করতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এছাড়াও নগরীতে আলোচনা রয়েছে সিসিকের সাবেক মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ প্রভাবশালী অনেক আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশত্যাগে তিনি সহযোগিতা করেছেন।

নাম না প্রকাশ সর্তে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এছাড়াও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শফিউল আলম জুয়েল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য তাহমিন আহমদসহ অনেকের ব্যবসাসহ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

এমনকি বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে আওয়ামী সরকারের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। যদিও বিএনপির হাইকমাণ্ডের এ ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। বিএনপির এ নির্দেশনায় বলা হয়- ‘স্বৈরশাসক গোষ্টীর সাথে জড়িয়ে যারা ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন, তাদের দলে না ভেড়াতে কিংবা সুবিধা না দিতে। কিন্তু সিলেটের নেতারা চলছেন উল্টো স্রোতে। দলের কঠোর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিলেটে স্বৈরাশাসকের সুবিধাভোগীদের নিয়ে মিলেমিশে যেনো ব্যবসা শুরু করেছেন বিএনপির সুবিধাভোগী নেতারা। এমনকি স্বেরশাসকের দোসর ও সুবিধাভোগীদের ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা এবং তাদের পুণর্বাসনেও তৎপর তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলেমিশে করা হয়েছে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের কমিটি। এমনকি যারা খেলার সঙ্গে যুক্ত নয়, তাদের অনেককে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

ইতোমধ্যে শিল্পপতি রাগিব আলীকে সভাপতি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগরের ভারপাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০ অক্টোবর গঠিত এই কমিটির প্রথম সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিনিয়র সহসভাপতি পদে রাখা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীমকে।

সদ্য গঠিত মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের কমিটি গঠনের শুরুতেই ফাটল ধরেছে। ইতোমধ্যে কমিটি থেকে চার সহ সভাপতিসহ ৭জন নিজেদের পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সিলেট মহানগর বিএনপির এক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সিলেট বিএনপির নেতারা এখন সুবিধা নিতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতা-ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতে মরিয়া। কেবল মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব-ই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীদের অতিযত্মে লালন করছেন তারা।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ড. আহমদ আল কবীরের মালিকানাধীন সীমান্তিকসহ তার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির দেখভালের দায়িত্বে আছেন প্রভাবশালী ওই বিএনপি নেতা।

এছাড়া সিলেটের আরো বেশ কয়েকটি দামিদামি হোটেল রেস্তোরা বিগত দিনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসায় করলেও সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় চলে এসেছেন। সিলেট চেম্বারের সাবেক এক পরিচালকের অভিজাত একটি পার্টি সেন্টারও বিএনপি নেতাদের জন্য উন্মোক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই পার্টি সেন্টারের মালিক সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে প্যানেলভূক্ত হয়ে সিলেট চেম্বারে নির্বাচন করেন। এমন কী তার ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয়ে আসছিলেন। এখন বিএনপির নেতারাও সুবিধাভোগের জন্য সেসব প্রতিষ্ঠানকে মুশকিল দূর করতে ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন, বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

নেতারাও সুবিধাভোগের জন্য সেসব প্রতিষ্ঠানকে মুশকিল দূর করতে ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন, বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা চলছে দখল ও দাপটের মহাৎসোব। জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা ও বিএনপি এবং যুবদল এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতারা মিলে রাস্তার পাশে দোকান দখল, আওয়ামী লীগ পস্থি নেতাদের গাড়ির মালিকা হস্থান্তর, পরিবহনের বিভিন্ন কাউন্টার দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন তারা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাদের সেইভ করতে নিচ্ছেন বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয়।

অনেকই রাতারাতি হয়ে গিয়েছেন টার্মিনাল এলাকায় দোকানের মালিক আবার কেউ হয়েছেন বাস গাড়ির মালিক। আবার কেউ কেউ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মালিকানাধিন হোটেলের দায়িত্ব। অথচ যাদের পূর্নবাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে তারা বিগত সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপর নির্যানত করেছে চরম হারে। এমনকি পুলিশ সাথে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে গ্রেফতারের জন্য তল্লাশী চালিয়েছে। প্রায় ৩মাস যেতে না যেতে সবাই ভুলতে বসেছেন এই সকল অপরাধের কথা। প্রকাশ্যে যারা অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করেছিলে এবং বিভিন্ন ভাবে অপপ্রচার চালিয়ে আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলে তারা এখন বিএনপি ও জামায়াতের গুণগান গেয়ে রক্ষা পেতে কৌশলী হয়ে উঠেছে।

এছাড়া তথ্য মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেসকল মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিরোধিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই দিকে লক্ষ্যে না দিয়ে একটি মহল বিগত সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধিতাকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর দায়িত্ব নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিলেটের মিডিয়া পাড়ার অনেকেই বিগত ৫ আগস্টের পূর্বে উস্কানী মুলক বক্তব্য নিজ মিডিয়া স্বৈরাচারের পক্ষে নানা গুণগান গেয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তাদের পূর্ণবাস দিতে মরিয়া হয়েছে উঠেছে একটি মহল এছাড়াও এই সকল স্বেরাচারের দোসরদের ও তাদের প্রতিষ্ঠানকে সকরকারী-বেসরকারী ভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালায় দাওয়াত দিয়ে পাশে বসানো হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।