যত দ্রুত সম্ভব দেশ থেকে পলিথিন ব্যাগ সরিয়ে দিতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, সব ধরনের প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আমাদের এই যুদ্ধ না।
আমাদের এই কাজটা হচ্ছে শুধু মাত্র পলিথিন শপিং ব্যাগের বিষয়ে। ময়লার বিনের যে পলিথিন কিনে নেন, সেটার ওপর আমাদের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কারণ সেটার কোনো বিকল্পে আমরা এখনো যেতে পারিনি। প্লাস্টিকের বয়ম যেটা কিনেন, সেটার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধু পণ্য কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় প্লাস্টিকের ব্যাগে নেবেন না এবং বাসা থেকেও কোনো পলিথিনের ব্যাগ আনবেন না। যত দ্রুত সম্ভব পলিথিনের ব্যাগ দেশ থেকে আমরা সরিয়ে দিতে চাই।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সুপারশপে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বর্জন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডির দুটি সুপারশপ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, আমরা পলিথিনের ব্যবহারের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার বাস্তব প্রয়োগ শুরু করছি। এটা কিন্তু একবার প্রয়োগ হয়েছিল দুই বছরের জন্য। অনেক মার্কেটে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পলিথিন প্রায় উঠেই গিয়েছিল গ্রাম পর্যন্ত। তারপর আর মার্কেট মনিটরিং ছিল না। এখন আবার ফিরে এসেছে। সুপার মার্কেট মালিক অ্যাসোসিয়েশন যারা আছেন তারা খুব খুশি মনে এটা করতে রাজি হয়েছেন। তারা এটার বিপদটা বুঝেন। এটা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য করা একটা ভালো কাজ। এটায় তারা রাজি হয়েছেন। তারা কিছু বিকল্পের কথা বলেছেন। তাদের কিছু কিছু প্রচলন ছিল, কিন্তু পুরো প্রচলন ছিল না। আমরা সবাই তো বাজারে যাই, আমরা জানি। সেখানে আমরা পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা যৌথভাবে ক্যাম্পেইনটা করছি। যেন পলিথিন শপিং ব্যাগটা উঠে যায় এবং সেখানে পাট বা কাপড়ের ব্যাগটা আনব। আমরা পুরোনো কাপড় যেটা ব্যবহার করে ফেলে দেই সেটা যেন এখানে আনতে পারি। প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে পলিথিন শপিং ব্যাগের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নের দিকে যাওয়া। আমরা সুপারশপ দিয়ে শুরু করেছি। ক্রমান্বয়ে আমরা ঢাকার বাইরে যাবো। একসময় মুদি দোকান, কাচা বাজারে যাব। কাঁচা বাজারে আমাদের কাজ শুরু হবে ১ নভেম্বর।
বর্তমানের নিষেধাজ্ঞা শুধু পলিথিন ব্যাগের ওপর উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এখানে একটা অর্থনৈতিক ব্যাপার আছে সেটা রাতারাতি আপনি বন্ধ করতে পারবেন না। কিন্তু কিছু পলিথিন, যেটা একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন স্ট্র, কফির মগ, প্লেট, গ্লাস, ব্যানার যেটা একবার ব্যবহার করে আমরা ফেলে দেই। এরপর এগুলো গিয়ে খালে, নদীতে, সাগরে পড়ে। সেখান থেকেই মাইক্রো প্লাস্টিক হচ্ছে। এরপর আমরা কাজ শুরু করবো একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেনো সংবেদনশীল জায়গায় না যায়। যেমন আমরা সেন্টমার্টিনে থেকে কাজটা শুরু করতে চাচ্ছি। যেন সেখানের হোটেল মোটেলে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার না হয়।
প্রথমেই আমরা সুপারশপ দিয়ে শুরু করছি কারণ এখানে মনিটরিং করাটা সুবিধা মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমাদের লোকবলেরও অভাব আছে। তাই আমরা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এরপর আমরা কাচা বাজারে যাব। ১ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন বন্ধ না হয়, ততক্ষণ এই অভিযান চলবে।
পলিথিনের বিকল্প পাট বা কাপড়ের ব্যাগের সরবরাহের প্রস্তুতি কেমন সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলেই আবিষ্কার হয়। চাহিদা থাকলেই জোগান আসে। আপনি যদি মনে করেন, সব পলিথিন ব্যাগের বিকল্প মাঠে থাকলেই তখন আপনি কাজ শুরু করবেন, তাহলে কাজটা আর হবে না। কারণ পলিথিন যারা উৎপাদন করেন, তারা এই কাজটা করতে দেবেন না। এছাড়া এখনো কেউ বলেনি, সরবরাহের ঘাটতি আছে।
আপনার মতামত লিখুন :