https://shikhabd.com/google0928d57da4654288.html

প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে আব্দুল জব্বার জলিল কল্যাণ ট্রাস্টের স্মারকলিপি


Shikha BD প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ৪:২৭ অপরাহ্ন /
প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে আব্দুল জব্বার জলিল কল্যাণ ট্রাস্টের স্মারকলিপি

শিখাবিডি ডেস্ক :: ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২১১৬.৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বেসামরিক বিমান চলাচল কমকর্তাদের অবহেলা, অনিয়ম ও ষড়যন্ত্রের তদন্ত এবং দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুর ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুসের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন আব্দুল জব্বার জলিল কল্যাণ ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে ২১১৬.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও দেশি-বিদেশি ফ্লাইট চালুর লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট কাজ শুরু করে ২০২৩ সালের ২৭ মে এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদপূর্ণ হয়ে আরও একবছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও মাত্র ২২% কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ২০% কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর এর সংশ্লিষ্টদের কাছে ধরা পড়ে প্রকল্পের নকশাটি ‘ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)’ এর মানদণ্ডে হয়নি। সিলেটবাসীর ধারণা প্রকল্পের অর্থলোপাটের উদ্দেশ্যেই সংশ্লিষ্টরা জ্ঞাতসারেই নকশায় এই ত্রুটি রেখেছিলেন। ফলে শুরুতেই থমকে যায় ২১১৬.৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ। এতে প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী অযত্ন ও অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। সিলেটবাসী মনে করছেন, মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে এ প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, প্রকল্প শুরুর আগেই ইক্যুইপমেন্ট মোবিলাইজেশন বাবত অগ্রিম ২১২ কোটি টাকা গ্রহণ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ২২% কাজ হয়েছে বললেও আমার ধারণা এখনো প্রতিষ্ঠানটি ১০০ কোটি টাকার বেশি কাজ করেনি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখনো অগ্রিম নেওয়া টাকার ভাগের হিসেবও দেয়নি। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্নের লক্ষ্যে দুইজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হলেও ‘সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ (ঈঅঅই)’ কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার জন্য তারা প্রকল্প থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। আমার বিশ্বাস তদন্তে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যাবে। এছাড়া ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নকশায় ত্রুটি রেখে প্রকল্পের কাজ শুরুর একমাত্র কারণ ছিল প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে অর্থ আত্মসাত। এর প্রমাণও মিলছে এখন। প্রকল্পের প্রায় ৩০% কাজ বাদ দিয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২১১৬.৫ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৯১৬.৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের মূল নকশা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৩টি বোডিং ব্রিজ, কার্গো বিল্ডিং এন্ড পার্কিং এরিয়া, কার্গো এনেক্স বিল্ডিং, ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ইত্যাদি। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনে অনেক সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার হয়েছে। এসব সংবাদের সূত্র ধরে তদন্ত করলেও প্রকল্পের দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য প্রমানাদি পাওয়া যাবে।
স্মারকলিপিতে আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলের অন্তত ২৫ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করে রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসীদের সিংহভাগই সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দা। মাতৃভূমি ও পরিবার-পরিজনের টানে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক প্রবাসী দেশে আসেন। তাই সিলেটের প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাতে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও ওসমানী বিমানবন্দর থেকে অপারেট করার দাবি জানিয়ে আসছে । অতীতে বিভিন্ন সময় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও সিভিল এভিয়েশনের কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঢাকার কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক ও হোটেল মালিক মিলে গঠিত সিন্ডিকেট সেই উদ্যোগ সফল হতে দেননি। কারণ সিলেট থেকে বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু হলে সিলেটের প্রবাসীরা সরাসরি সিলেট থেকে যাতায়াত করবেন। এতে ঢাকার ট্রাভেল এজেন্সি ও হোটেল মালিকরা সিন্ডিকেট করে অর্থ লোটপাটের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি ও শোষনমুক্ত- সারাদেশের মানুষের মতো সিলেটবাসীও এমন স্বপ্ন দেখছেন। আপনার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের আপোষহীন মনোভাবের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। সিলেটবাসী মনে করছেন আপনার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দক্ষ নেতৃত্বে সকল দুর্নীতির শেকড় মুলোৎপাটন করে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্নের পাশাপাশি ওসমানীকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হবে। পূণ্যভূমির আকাশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি উড়োজাহাজ উড়বে ।
স্মারকলিপিতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প কাজের অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দ্রুত প্রকল্পটির কাজ সম্পন্নের উদ্যোগ এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুর ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়।