মামলা অভিযোগ ও অপপ্রচারের মাধ্যমে হয়রানির প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানিয়েছেন সিলট নগরের করিম উল্লাহ্ মার্কেটের স্বত্ত্বাধিকারি ছানা উল্লাহ্ ফাহিম ও কুদরত উল্লাহ ফাহের এর পক্ষে আতাউল্লাহ সাকের। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সিলেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এর আইনী প্রতিকার দাবি করেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে আতাউল্লাহ সাকের বলেন, সিলেট নগরের করিম উল্লাহ্ মার্কেটটি অতি প্রাচীন একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। দেড়শতাধিক বছর ধরে আমরা অতি সুনামের সাথে মার্কেটের ব্যবসা চালিয়ে আসছি। আমাদের ব্যবসার মধ্যে কোনোরূপ অনিয়ম, গাফিলতি, প্রতারণা কিংবা অব্যবস্থাপনার লেশমাত্র নেই। তিনি বলেন, প্রাচীনতম করিম উল্লাহ্ মার্কেটের স্থলে ২০০১ সালে আমরা বিদ্যমান ৭ তলা বিশিষ্ট বানিজ্যিক ভবন নির্মান করি। বর্তমানে এ মার্কেটে অফিস-ব্যাংকসহ বিভিন্ন অভিজাত পণ্যের ৬২২টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রসারিতব্য মার্কেটের ৮ তলা বিশিষ্ঠ সি- সেকশনে এবং ১০ তলা বিশিষ্ঠ ডি- সেকশনে ৮২০ টি দোকান নির্মানাধীন রয়েছে। বিধি ও শর্ত মোতাবেক আমরা দোকান ও অফিস স্পেইস ভাড়ায় বন্দোবস্ত দিয়ে থাকি। সেই হিসেবে অনেক প্রবাসী করিম উল্লাহ্ মার্কেটের দোকান কোটা বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এদের অনেকেই কর্মস্থল জনিত প্রয়োজনে প্রবাসে অবস্থান করে থাকেন। তাই তাদের বন্দোবস্তীয় দোকান ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নিমত্তে প্রায়ই আমাদেরকে অনুরোধ করে থাকেন। তাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমরা মালিক পক্ষ দোকান ভাড়া প্রদানে আন্তরিকভাবে সহযেগিতা করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০০৩ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নাজমুল আমাদের করিম উল্লাহ্ মার্কেট-এর ২য় তলাস্থ ৩৪ নং দোকানটি ‘ভাড়ায় বন্দোবস্ত’ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ সময় ৩১টি শর্তাবলী পালন ও মেনে চলার জন্য আমরা উভয়পক্ষ অঙ্গীকরাবদ্ধ হই। বন্দোবস্তের পর একটি অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নাজমুল সাহেবের বন্দোবস্তীয় দোকানটি মোঃ ফকরুল ইসলাম নামে একজনের কাছে ভাড়া দিতে সহযোগিতা করা হয়। ভাড়াটিয়া ফকরুল ইসলাম বন্দোবস্ত গ্রহীতা আমিরুল ইসলাম নাজমুলকে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেছেন। ফকরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ওই দোকানে ব্যবসা করেন। এ সময়ও দোকানের কোনো ভাড়া অনাদায়ী থাকেনি। এ অবস্থায় বন্দোবস্ত গ্রহীতা আমিরুল ইসলাম নাজমুল তার ভগ্নপতি এমএস সাঈদ চৌধুরী বেলালকে দিয়ে ব্যবসা করাবেন বলে জানিয়ে মোঃ ফকরুল ইসলামের স্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের সহযোগিতা চান। আমাদের সহযোগিতায় তিনি ফকরুল ইসলামের স্ত্রীকে বুঝিয়ে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন। এর পর থেকে তার ভগ্নিপতি বেলাল ওই দোকানে ব্যবসা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২০২০ সালে প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নাজমুল আমাকে ফোন করে জানান, তার ভগ্নিপতি বেলাল দোকানভাড়া, বাড়িভাড়া সহ অন্যান্য সহায় সম্পত্তির কোনো আয় তাকে দিচ্ছেন না। বেলাল তাঁর বাড়ি ও দোকান অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছেন। তিনি তার ভয়ে দেশে আসতে পারছেন না। এ বিষয়ে তিনি আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমি তাদের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেই। ফলে ভগ্নিপতি বেলাল দোকান ছেড়ে দিতে সম্মত হন। তখনই বন্দোবস্ত গ্রহীতা আমিরুল ইসলাম নাজমুল তার দোকানে একজন ভালো ভাড়াটে দেওয়ার জন্য আমার কাছে ফের অনুরোধ করলে আমি কবির আহমদ নামে একজনকে কথা দেই। ইত্যবসরে প্রবাসী আমিরুল ইসলাম আমাকে না জানিয়ে দিলদার হোসেন নামে অন্য একজনকে দোকান ভাড়া দিয়ে দেন। এ সময় আমি তাকে তলব করলে তিনি সময় স্বল্পতা দেখিয়ে তার ব্যাংক একাউন্ট দিয়ে ইংল্যান্ড চলে যান এবং বলেন আমার একাউন্টে ভাড়ার টাকা জমা হলেই চলবে। তার কথামত আমি কবির নামে আরেকজনকে ওই দেকানে অংশীদার ভাড়াটে দেই। তারা উভয়ই দোকানে ব্যবসা করেন এবং আমিরুল ইসলামের একাউন্টে নিয়মিত ভাড়া জমা দিতে থাকেন। এরই মধ্যে মেকানিক দিলদারের ভাই বিদেশ চলে যাওয়াতে ওই মেকানিক তার ভাইয়ের দোকানে চলে যান এবং দোকানের ডেকোরেশন এর বিনিময়ে অংশীদার কবির আহমদের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা বুঝে নেন। কবির আহমদ দোকান চালানো অবস্থায় বৈশ্বিক মহামারী কোভিড দেখা দেয়। কোভিড চলাকালে ২০২০ সাল হঠাৎ পুলিশ আমাদের বাড়িতে নোটিশ নিয়ে আসে। আমরা জানতে পারি আমিরুল ইসলাম নাজমুল লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তখন হতে চলছে পুলিশের তলব মতে আমাদের হাজিরা। ইতোমধ্যে আমিরুল ইসলাম নাজমুল হাই কমিশনের মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার মিথ্যা অভিযোগ প্রেরণ করে আমাদের বার বার হয়রানীর শিকার করিয়ে চলেছেন। পুলিশের পাশাপাশি সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। প্রতিবেদনগুলো আমাদের পক্ষেই আসে। সংবাদ সম্মেলনে আতাউল্লাহ সাকের অভিযোগ করে বলেন, পরবর্তীতে আমিরুল ইসলাম নজমুল বন্দোবস্তীয় চুক্তিপত্রের বিভিন্ন শর্ত ভঙ্গ করে অক্টোবর ২০২০ থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত আমাদের ভাড়া বকেয়া রাখেন। তাই আমরা ১ম পক্ষ ২০২১ সালের ৩১ মে বন্দোবস্ত গ্রহীতা পক্ষ আমিরুল ইসলাম নাজমুল কর্তৃক শর্তভঙ্গের দায়ে আমাদের নিযুক্তীয় অ্যাডভোকেট মারফত সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১০৬ ধারায় তার কাছে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করি। প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নাজমুল আামাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে একাধিকবার মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া ছাড়াও থানায় একটি জিডি এবং আদালতে ফৌজদারী ও স্বত্ত্ব আইনে পৃথক ২টি মামলাও দায়ের করেন। মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন। বিচারাধীন মামলাগুলোর রায়ের অপেক্ষায় থাকাবস্থায় প্রবাসী আমিরুল ইসলাম সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদে অপবাদমূলক নানা অভিযোগ দিয়ে এবং তা মিডিয়ায় প্রচার করে আমাদের ব্যাবসায়িক সুনাম ক্ষুন্ন করে চলেছেন। ফকরুলের স্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার নামে ২ লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে দোকানের ভাড়াগ্রহনের কথা অস্বীকার করে আতাউল্লাহ সাকের বলেন, এ সব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং নাজমুলের কাছে এর কোনো প্রমান নেই। সংবাদ সম্মেলনে আতাউল্লাহ সাকের এহেন হয়রানী ও অপপ্রচারের নিন্দা জানিয়ে এর প্রতিকার দাবি করেন।
আপনার মতামত লিখুন :